Tuesday, June 9, 2015

হজ্জের ফজিলত গুরুত্ব ও তাৎর্পয


হজ্জ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণএকটি বুনিয়াদি স্তম্ভ। হজ্জ শব্দের আভিধানিক অর্থ; সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা।

আল্লাহর নির্দেশ মেনে ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সৌদি আরবের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে সফর করা এবং ইসলামী শরীআহ অনুসারে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ড সম্পাদন করার নামই হজ্জ। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম  ১০ম হিজরীতে একবার স্বপরিবারে হজ্জ পালন করেন। ৯ম বা ১০ম হিজরীতে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম  এর মাধ্যমে হজ্জকে ফরয করা হয়। হজ্জ সম্পন্ন করতে জিলহজ্জের ৮ থেকে ১৩ তারিখে মাধ্যে আরবের মক্কা,মিনা, আরাফা ও মুযদালিফায় নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতে হয়।

  হজ্জ সম্পাদনের অন্যতম একটি অংশ হলো ৯ জিলহজ্জ আরাফা ময়দানে অবস্থান করা। এ আরাফা ময়দান হাশরের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তিৃত এক ময়দানে। হাদীসে হজ্জযাত্রীদের আল্লাহর  মেহমান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে সূরা হাজ্জ (২২নং সূরা) নামে একটি সূরা রয়েছে, যেখানে হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচিত হয়েছে।নারীদের জন্য হজ্জ হলো জিহাদের সমতুল্য। আর এটি জান্নাত লাভের একটি অবলম্বন স্বরুপ।
হজ্জ একজন মুসলমানের মাঝে শান্তি ও শুদ্ধি আনয়ন করে এবং অতীতের সকল পাপ মোচন করে দেয়। হজ্জ সফরে ইহরামের (কাফন) কাপড় পরে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে পরকালের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হজ্জের সফরে আল্লাহর  বিধি নিষেধ মেনে চলা স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে মুমিনের জীবন লাগামহীন নয়। মুমিনের জীবন আল্লাহর  রশিতে বাঁধা।

  হজ্জের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়া আখেরাতের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়ার কথা স্মরন করিয়ে দেয়।হজ্জ মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর  স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী মহাজাতিতে পরিণত হতে উদ্বুদ্ধ করে।এখন বাংলাদেশ থেকে হজ্জসফর সম্পাদন করতে ১৫-৪০ দিন সময় লাগে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫-৩০ লক্ষাধিক মুসলিম হজ্জ পালন করেন।

হজ্জের গুরুত্ব

এবং মানবজাতিকে হজ্জের কথা ঘোষণা করে দাও; তারা পায়ে হেঁটে ও শীর্ণ উটের পিঠে করে তোমার কাছে আসবে, তারা দুর-দুরান্তের পথ অতিক্রম করে আসবে (হজ্জ এর উদ্দেশ্যে)। সুরা-আল হজ্জ, ২২:২৭

আর এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, যে মাকামে ইব্রাহিমে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যার সামর্থ্য রয়েছে (শারীরিক ও আর্থিক) তার এই কাবায় এসে হজ্জ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয বা অবশ্য কর্তব্য,আর যদি কেউ এ বিধান (হজ্জ) কে অস্বিকার করে তবে;(তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহর বিশ্বজগতের কারো মুখাপেক্ষী নন। সুরা-আলে ইমরান, ৩:৯৭

নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অর্ন্তগত, অতত্রব যে ব্যাক্তি এই গৃহে হজ্জ ও উমরাহ করে তার জন্যে এই উভয় পাহাড়ের মাঝে প্রদক্ষিণ করা দোষণীয় নয়, এবং কোন ব্যাক্তি নিষ্ঠার সাথে স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে,আল্লাহ কৃতজ্ঞতাপরায়ন ও সর্বজ্ঞাত। সূরা-আল বাকারা, ২:১৫৮

তোমরা আলাহর জন্য হজ্জ ও উমরাহ পালন কর। সূরা-আল বাকারা, ২:১৯৬

আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করে নাও (হজ্জ যাত্রার জন্য), বস্তুত: উকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া (আল্লাহভীতি ও ধর্মনিষ্ঠা) এবং হে জ্ঞানীরা, তোমরা আমাকে ভয় কর। সূরা-আল বাকারা, ২:১৯৭

বিদায় হজ্জে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, হে জনগণ! তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও।  মুসলিম,নাসাঈ,আবু দাউদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি হজ্জের সংকল্প করে, সে যেন দ্রুত সেটা সম্পাদন করে। আবু দাউদ, মিশকাত-২৫২৩

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, হজ্জ একবার, যে ব্যাক্তি একাধিকবার করবে তা

(তার জন্য) নফল হবে। আবু দাউদ-১৭২১

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, তিনটি দল আল্লাহর মেহমান; আলাহর পথে

জিহাদকারী, হজ্জকারী ও উমরাহ পালনকারী। নাসাঈ, মিশকাত-২৫৩৭

এক হাদীসে এসেছে, উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম কে জিজ্ঞসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, তারপর কি?, তিনি বললেন, আল্লাহ পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। বুখারী-১৪২২

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, হজ্জ পালনে অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পথে ব্যয় করার সমতুল্য। এক দিরহাম ব্যয় করলে উহাকে সাতশত পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আহমদ, বায়হাকী

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন,আগুন যেভাবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহা থেকে খাঁদ দূর করে, তেমনি যদি তোমরা তোমাদের দারিদ্রতা ও পাপ মোচন করতে চাও তাহলে তোমরা পর পর হজ্জ ও উমরাহ পালন কর। তিরমিযী, নাসাঈ

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ হজ্জ,উমরাহ পালন অথবা জিহাদের জন্য যাত্রা করে এবং পথিমধ্যে যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে আল্লাহ এর জন্য তাকে পূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দেবেন। মিশকাত-২৫৩৯

হাদীসে আরও এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, কারো ইসলাম গ্রহণ পূর্বকৃতসকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়,ও হজ্জ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়। মুসলিম-১৭৩

আবু হুরায়রাহ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ পালন করল এবং নিজেকে গর্হিত পাপ কাজ ও সকল ধরনের পাপ কথা থেকে বিরত রাখল তাহলে সে হজ্জ থেকে এমন নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক হয়ে ফিরে আসবে যেমন সে তার জন্মের সময় ছিল। বুখারী-১৪২৪, মুসলিম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, মাবরুর হজ্জের (কবুল হজ্জের) পুরষ্কার বা প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়। বুখারী-১৭৭৩/১৬৫০, মুসলিম

No comments:

Post a Comment