বাসা-হোটেল কাছে দূরে,
উন্নত-অনুন্নত হওয়ার উপর ভিত্তি করেই সবুজ ও নীল ক্যাটাগরি নির্ণয় করা হয়; কেননা অন্যান্য
খরচ উভয় ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে অভিন্ন। আপনি সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ-গমন বিষয়ে মনস্থির
করলে ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময় ও নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দিন। ধর্ম-মন্ত্রণালয়
কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরম পূরণ করে যে কোনো অনুমোদিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রদত্ব রসিদ
নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিসে রিপোর্ট করুন। টাকা জমা দেয়ার রসিদ ও অন্যান্য কাগজ পত্র
রাখতে হবে যত্ন সহকারে ও তা দেখিয়ে অফিস থেকে বলে দেওয়া সময়ে উপস্থিত হয়ে বিমানের টিকিট
ও পিলগ্রিম পাস সংগ্রহ করতে হবে হজ ক্যাম্প থেকে। আপনার জমা দেয়া টাকা যে সব খাতে ব্যয়
করা হয় তা হল নিুরূপ:
১. বিমান ভাড়া। ২. এম্বারকেশন
ফি। ৩. ভ্রমণ কর। ৪. ইনস্যুরেন্স ও সারচার্জ (ব্যাজ কার্ড, পুস্তিকা, কবজি-বেল্ট,আই,টি
সার্ভিস, পিলগ্রিম পাস ইত্যাদি) ৬. মুয়ালি−ম - সৌদি আরবের হজ কনট্রাক্টার ফি ৭. মক্কা ও মদিনা
শরীফের বাড়ি ভাড়া ৮. সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া ও কোরবানি খরচ যা হাজিদেরকে
বাংলাদেশেই ফিরিয়ে দেয়া হয়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার
আওতায় “এ+” “এ” “বি” “সি” ইত্যাদি ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনার শক্তি-সামর্থ্য
অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। যেসব এজেন্সির সুনাম, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সরকারের অনুমোদন
রয়েছে সে গুলোর মধ্যে কোনো একটি তালাশ করে বের করুন। তাদের নির্ধারিত টাকা চুক্তি মাফিক
পরিশোধ করুন। পাকা রসিদ ব্যতীত কেবল বিশ্বাসের ওপর টাকা দেবেন না কখনো। খরচের হিসাব
এবং কী-কী সুবিধা আপনি তাদের কাছ থেকে পাবেন, এ ব্যাপারে মৌখিক নয়, বরং লিখিত চুক্তি
করুন। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়, এমন কাফেলা বা এজেন্সিকে কখনো টাকা দেবেন না।
হজ যাত্রীদের করণীয়
১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
প্রতি জেলায় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ডের মাধ্যমেই
ব্যবস্থা করা হয় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনিনজাইটিস প্রতিরোধক
টিকা, যা বাধ্যতামূলক, এ বোর্ডের মাধ্যমেই প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা
নিয়ে এ বোর্ড থেকে আপনাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে এ কাজটি
সম্পূর্ণ করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে ঢাকায় হজ ক্যাম্পে এসে সম্পূর্ণ করবেন। এ সনদ
ব্যতীত হজে যাওয়া সম্ভব হবে না।
২. পুলিশ ছাড়পত্র: সরকারী
ব্যবস্থাপনার হাজিদের জন্য জেলা প্রশাসকগণ পুলিশ সুপারের নিকট ছাড়পত্রের জন্য হজযাত্রীদের
তালিকা প্রেরণ করেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে হজ অফিসে ছাড়পত্র সরবরাহের
ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
৩. হজ প্রশিক্ষণ: সরকারি
ব্যবস্থাপনায় হজ পালনেচ্ছুদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে সুবিধা
মত সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হজ যাত্রার ৩ দিন পূর্বে হজ ক্যাম্পে
অবস্থানের সময় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কোনো-কোনোটা
ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি আরব গমনের পূর্বেই একদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে।
এসব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে মনোযোগের সাথে অংশগ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়াও কোনো কোনো বিজ্ঞ
আলেম অথবা মসজিদ কর্তৃপক্ষ হজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে সেখানেও অংশ গ্রহণ করা
উচিত।
অন্যান্য করণীয়:
হজ অফিস থেকে প্রেরিত অনুমতিপত্রে
নির্ধারিত যে তারিখ থাকবে, সে তারিখে সকাল ১০টার মধ্যে হজ ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করবেন।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীগন এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ
করবেন। হজ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারী ব্যবস্থাপনার হাজিগণ সাথে করে আনবেন অনুমতিপত্র,
ব্যাংকে টাকা জমা-দেয়ার রসিদসমূহ, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে আনতে হবে।
হজ ক্যাম্প ডরমিটরিতে শুধুমাত্র
হজযাত্রীদের অনুমতি দেয়া হয়। তাই আত্মীয় স্বজন সাথে আনা উচিত নয়। তবে নীচ তলায় আত্মীয়
স্বজনগণ তাদের হজযাত্রীকে নানাবিধ দাপ্তরিক কাজে সহায়তা দিতে পারেন। হজ ক্যাম্পে পান
খাওয়া বা ধূমপান করা নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে ৩ টি ক্যান্টিন
যা খোলা থাকে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা। তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।
টিকিট, পিলগ্রিম পাস, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য কাগজপত্র খুবই যত্নের সহিত সংরক্ষণ
করবেন। এ গুলো হারিয়ে গেলে হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। মালামাল বহনের জন্য যে লাগেজ বহন
করবেন তার গায়ে নাম, পিলগ্রিম পাস নং ও ঠিকানা লিখে নেবেন। কমপক্ষে ২সেট এহরাম, ২সেট
পায়জামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, একটি তোয়ালে, ২টি গামছা সঙ্গে
নেবেন। শীত মৌসুম হলে দু একটি গরম কাপড় বিশেষ করে চাদর সঙ্গে নেবেন। আপনার কোন অসুখ
থেকে থাকলে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সঙ্গে নেবেন।
বাংলাদেশ হজ মিশন জটিল
কোনো রোগের চিকিৎসা দেয় না। সৌদি আরবে ওষুধের দামও প্রচুর। তাই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে
যত্নবান হবেন।
জেদ্দা বিমান বন্দরে বিমান
থেকে বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করুন। বিশ্রাম কক্ষ হতে বহির্গমন বিভাগে গিয়ে পিলগ্রিম
পাসে সিলমোহর লাগাতে হবে। এখানে আপনাকে লাইন বেঁধে বসতে হবে। পিলগ্রিম পাসে সিল লাগানো
সম্পূর্ণ হলে আপনার ব্যাগ সংগ্রহ করবেন। ব্যাগ মেশিনে স্ক্যান করিয়ে মূল বিল্ডিং থেকে
বের হয়ে যাবেন। বের হওয়ার গেটেই ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে
নেবে যা আপনি জায়গা মতো পেয়ে যাবেন।
একটু সামনে এগোলে কিছু
অফিসার দেখতে পাবেন। তারা আপনার পিলগ্রিম পাসে বাসের টিকিট লাগিয়ে দেবে।কোনো একটি টিকিট
অব্যবহৃত থেকে গেলে তার পয়সা দেশে আসার সময় ফেরত পাবেন যা জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে
সংগ্রহ করে নিতে হবে।
বাংলাদেশের পতাকা টানানো
জায়গায় গিয়ে পাসপোর্টে মুয়াল্লিমের স্টিকার লাগাবেন। এরপর বাসে ওঠার জন্য লাইন ধরে
দাঁড়াবেন। আপনার মাল-সামানা গাড়িতে ওঠানো হল কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। বাসে
ওঠার পর ড্রাইভার হজ যাত্রীদের পিলগ্রিম পাস (পাসপোর্ট) নিয়ে নেবেন, এবং মক্কায় পৌঁছে
হজ কন্ট্রাক্টর (মুআস্সাতুত তাওয়াফার) কাছে সেগুলো হস্তান্তর করবেন। মক্কায় ও মদিনায়
বাস থেকে নেমে প্রথমে নিজের
মাল-সামানা সংগ্রহ করে নেবেন। মাল-সামানা নিয়ে সরকার অথবা এজেন্সির ভাড়া-করা বাসায়
আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে-দেয়া কক্ষে গিয়ে উঠবেন। প্রথমে মক্কায় এসে থাকলে গোসল করে
খাওয়া দাওয়া সেরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে উমরা আদায়ের প্রস্তুতি নিন। সরকারি ব্যবস্থাপনার
আওতাধীন হলে আপনার ফ্ল্যাটে অথবা আপনার নাগালের মধ্যে কোনো আলেম আছেন কি-না তা জেনে
নিন। আলেম না পেলে হজ উমরা বিষয়ে যাকে বেশি জ্ঞানসম্পন্ন মনে হবে তার নেতৃত্বে উমরা
করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। যাওয়ার পথে কিছু জিনিসকে আলামত হিসাবে নির্ধারণ করবেন
যাতে হারিয়ে গেলে সহজেই আপনার বাসা খুজে বের করতে পারেন। আলেম অথবা নেতা নির্ধারণের
সময় হকপন্থী কি-না,তা ভালো করে যাচাই করে নেবেন। অন্যথায় আপনার উমরা নষ্ট হওয়ার সমূহ
সম্ভাবনা রয়েছে।
মক্কায় পৌঁছার পর মুয়াল্লিম
অফিস থেকে দেয়া বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখবেন। এ বেল্টে মুয়াল্লিম অফিসের নম্বর লেখা আছে,
যা আপনি হারিয়ে গেলে কাজে লাগবে। ঘর হতে বাইরে যাওয়ার সময় বেশি টাকা পয়সা সঙ্গে রাখবেন
না। কেননা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে। আর সবসময় দলবদ্ধ হয়ে চলার চেষ্টা করবেন।একা
কখনো ঘরের বাইরে যাবেন না যতক্ষণ না আপনার বাসার লোকেশন ভালভাবে আয়ত্ব করতে না পারেন।রোদের
মধ্যে বাইরে বেশি ঘোরা-ফেরা করবেন না। প্রচুর ফলের রস ও পানি পান করবেন। প্রয়োজনে লবণ
মিশিয়ে পান করবেন। অনেকেই একের পর এক উমরা করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত
থাকবেন। শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ মিশনের ডাক্তার অথবা সৌদি সরকার কর্তৃক
স্থাপিত চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ সংগ্রহ করবেন। এ ব্যাপারে
কোন অলসতা করা উচিত হবে না। কেননা হজের কার্যক্রম অসুস্থ শরীর নিয়ে সম্পন্ন করা খুবই
কঠিন। হজ এজেন্সি বা মুয়াল্লিমের সাথে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে ঠান্ডা
মাথায় সমাধানের চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মকর্তাদের সাহায্যও নিতে পারেন,
যদি প্রয়োজন মনে করেন। মিনায়-আরাফায় ৭ জিলহজ দিবাগত রাতে অথবা ৮ জিলহজ সকালে এহরাম
অবস্থায় মুয়াল্লিম কর্তৃক সরবরাহ-কৃত বাসে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সাথে হালকা
কিছু কাপড়-চোপড়, শুকনো খাবার ও সামান্য টাকা পয়সা নেবেন। মূল্যবান জিনিসপত্র সাবধানে
ঘরে রেখে যাবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে টাকা পয়সা মুয়ালি−মের অফিসের কর্মকর্তার নিকট জমা রাখতে পারেন। তবে টাকা আমানত রেখে রসিদ
নিতে ভুলবেন না। শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে
মিনা আরাফায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।কঙ্কর মারার সময় কখনো পায়ের স্যান্ডেল
খুলে গেলে অথবা হাত হতে কঙ্কর পড়ে গেলে তা উঠাতে চেষ্টা করবেন না।
নিজেরা হাদী জবেহ করার
পরিকল্পনা করলে সবার পক্ষ থেকে সবল ও তরুণ ২/৩ জনকে প্রতিনিধি করে হাদী জবেহ করবেন।
তবে এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হওয়ায় মক্কা মদিনায় যে কোনো ব্যাংকে অগ্রিম টাকা
জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের পক্ষ থেকে হাদী জবেহ করে
দেবেন। এই প্রক্রিয়াটি সহজ ও নিশ্চিত। তাই অতি লোভনীয় অন্যসব প্রস্তাব বাদ দিয়ে এটাই
বেছে নিন।
No comments:
Post a Comment