Wednesday, June 10, 2015

রমজান মাসের আগে মুসলিমদের জন্য যা যা করণীয়

দুয়ারে কড়া নাড়ছে রমজান মাস। পবিত্র রমজান ইবাদতের মাস। পুণ্য অর্জনের মাস। রহমতের মাস। মাগফেরাতের মাস। জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। মহান আল্লাহ এ মাসে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য সব আয়োজন করে রাখেন।
এ মাসে প্রতি রাতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করতে থাকেন- ‘হে সৎ পথের দিশারি! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের পথিক! সতর্ক হও।’অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রমজানের রোজা আল্লাহর কাছে এই বলে সুপারিশ করবে- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দাকে দিনের বেলা ভোগ-সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই আজ আমি তার জন্য সুপারিশ করছি।’
আর কোরআনুল কারিম বলবে-‘আমি তোমার বান্দাকে রাতের বেলা সুখনিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। আমার কল্যাণে সে রাতে ঘুমাতে পারেনি। তাই আজ আমি তার জন্য সুপারিশ করছি।’ অতঃপর আল্লাহ তায়ালার দরবারে উভয় সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে।
এ মাসে একটি ফরজ আমলের মূল্য অন্য সময় সত্তরটি ফরজ আমলের সমপরিমাণ।
রাসূলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা)। রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা মোমিনের অন্তরে খোদাভীতি জন্ম দেয়। মনে প্রশান্তি অনুভব হয়।
সহজ ভাষায়- রমজান হলো পুণ্য অর্জনের মাস। ভালো আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভের মাস। খোদার নাফরমানি ত্যাগ করে খাঁটি মোমিনে রূপান্তর হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে আমলের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুষ্ট জিনদের আবদ্ধ করে রাখেন। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেন। আর জান্নাতের সব দরজা উন্মুক্ত করে দেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের প্রথম রজনীর সূচনাতেই শয়তান এবং দুষ্টু জিনদের বেড়িবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। তার একটিও খোলা থাকে না। জান্নাতের সব প্রবেশদ্বার খুলে দেয়া হয়। তার একটিও বন্ধ থাকে না।’
রোজার প্রতিদান বিষয়ে বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের দাবিতে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য, আর রোজার প্রতিদান আমিই দান করি।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
এমন বরকতি একটি মাস আমাদের সামনে সমাগত। তাই এ মাসের প্রতিটি আমল যথাযথভাবে আদায়ের লক্ষে আমাদের পূর্বপস্তুতি নেয়া উচিত। মানসিক এবং আর্থিকসহ সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রাখা একান্ত প্রয়োজন। রমজানে আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিনের নেজাম (নিয়ম বা রুটিন) পরবির্তন করেন। তাই আমাদেরও রমজান উপলে দৈনন্দিন চলার রুটিনে পরিবর্তন আনা উচিত। রমজানে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, তারাবির নামাজ আদায়, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের জন্য আদালা রুটিন করে রাখা অতীব জরুরি। না হয় অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝে এসব আমল হয়ে উঠবে না। এরই সঙ্গে খাবারের রুটিনেও পরিবর্তন আনা জরুরি। রুচিসম্মত হালাল খাবার, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় গ্রহণ রমজানের ইবাদতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আর সুন্নতি খাবার ‘খেজুর’ অব্যশ্যই রুটিনে থাকা চাই।
রামাযান শুরু হওয়ার আগের পরিকল্পনাঃ
১) রামাযান শুরু হওয়ার আগেই ঘরবাড়ি পরিস্কার করার কাজ সেরে রাখুন। ঘরে সাজিয়ে রাখা শোপিস, ফুল, ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দেয়ালে টাঙ্গানো ছবি, পর্দা, রান্নাঘরের কেবিনেট, রেফ্রিজারেটর, ওভেন ইত্যাদি। ২) রামাযানের আগেই মুদি দোকানের সব কেনা কাটা করে নিন এবং সব গুছিয়ে রাখুন প্রয়োজনে কৌটার গায়ে জিনিস পত্রের নাম লিখে রাখুন যেন দরকারের সময় অযথা খুঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট না করতে হয়। ৩) যে জামা-কাপড় গুলি অনেক দিন জমিয়ে রেখেছেন লন্ড্রিতে দিবেন বা বাসায় ধুয়ে নিবেন সেগুলি ধুয়ে ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে রাখুন। নয়তো এগুলির জন্য আপনাকে পরিশ্রম এবং টেনশন দুটোই করতে হবে । ৪) বাইরের ভেজাল খাবার না খেতে চাইলে রমজানের আগে কিছু কিছু খাবার দু চার দিন বা এক সপ্তাহের জন্য রান্না করে ফ্রিজ আপ করে রাখতে পারেন। যেমন গোস্তের কিমা, ছোলা, সিদ্ধ, মিষ্টি দই ইত্যাদি।এতে করে ঘরের বানানো নির্ভেজাল খাবার খেতে পারবেন এবং কয়েকদিনের জন্য ফ্রী থাকবেন যাতে এই সময়টা ইবাদাতের কাজে লাগাতে পারেন। ৫) সারা মাস জুড়ে চলে ঈদের কেনা কাটার ব্যস্ততা। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি রমজান শুরু হওয়ার আগেই পরিবারের সবার জন্য লিস্ট করে ঈদের কেনা কাটা সেরে ফেলুন। এতে একদিকে যেমন সময়কে সুস্থ ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন তেমনি বাড়তি খরচ থেকেও মুক্তি পাবেন।

No comments:

Post a Comment